আন্ডার ওয়ার্ল্ডের ‘ডন’ জিকে শামীমকে গ্রেফতার করার পর সংবাদ মাধ্যম জিকে শামীম কে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি বলে সংবাদ প্রকাশ করে তখন সারা দেশে আলোড়ন সৃষ্ঠি হয়। গতকাল নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সংবাদ মাধ্যম কে জানিয়েছিলেন জিকে শামীম নামে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি কেউ নেই। আমি তাকে চিন না। আব্দুল হাইয়ের এমন মন্তব্যের একদিন পর আজ টেন্ডারবাজ জিকে শামীমের নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ মো. বাদলের ছবি ভাইরাল হয়েছে। ছবিতে আবু হাসনাত শহীদ মো. বাদল অসুস্থ হয়ে বিছানায় শয্যাশায়ী। তার পাশে দাঁড়ানো জিকে শামীম ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই। তবে, এই ছবিটি ঠিক কবে, কোন হাসপাতালের, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এ ছবির মাধ্যমে আব্দুল হাই এবং বাদলের সাথে জিকে শামীমের সম্পর্ক রয়েছে তার একটি প্রমাণও মিলেছে।
সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভাতে দলটির ৭ নম্বর সহসভাপতি হিসেবে জিকে শামীমের নাম প্রস্তাব করা হয়েছিলো। আর এই প্রস্তাবক ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ মো. বাদল।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সোনারগাঁ উপজেলার সন্মানদী ইউনিয়নের দক্ষিণপাড়া গ্রামের মৃত মো. আফসার উদ্দিন মাস্টারের ছেলে শামীম। আফসার উদ্দিন মাস্টার ছিলেন হরিহরদি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিন ছেলের মধ্যে জি কে শামীম মেজো। বড় ছেলে গোলাম হাবিব নাসিম ঢাকায় জাতীয় পার্টির রাজনীতি করেন। সন্মানদী ইউনিয়নের বাসিন্দারা জানান, প্রাইমারি স্কুল ও হাই স্কুল পাস করার পর তাঁদের গ্রামে দেখা যায়নি। ঢাকার বাসাবো আর সবুজবাগ এলাকায় বড় হয়েছেন।তিনি সবসময় ছয়জন অস্ত্রধারী দেহরক্ষী প্রটেকশন নিয়ে চলেন। সবার হাতেই থাকে শর্টগান। গায়ে বিশেষ সিকিউরিটির পোশাক। তাদের একেকজনের উচ্চতা প্রায় ছয় ফুট। শামীম ছোটখাটো মানুষ হলেও তার ক্ষমতার দাপট আকাশসমান।
গণপূর্ত মন্ত্রণালয় কিংবা যুবলীগের পার্টি অফিস, বিয়ে বাড়ি কিংবা বন্ধুর বাড়ি, যেখানেই তিনি যান, সঙ্গে থাকে অস্ত্রধারী প্রটোকল বাহিনী। ভারী অস্ত্র নিয়ে ছয়জন নিরাপত্তারক্ষী আগে-পিছে পাহারা দিয়ে তাকে নিয়ে যান। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর অবৈধ অস্ত্রসহ গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন জি কে শামীম।
বাসাবো এলাকায় পাঁচটি বাড়ি এবং একাধিক প্লট রয়েছে শমীমের। বাসাবোর কদমতলায় ১৭ নম্বরের পাঁচতলা বাড়িটি জি কে শামীমের। এই বাড়িটি ম্যানেজার হিসেবে দেখাশোনা করেন স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো. ইসমাইল হোসেন সর্দার। শামীম কয়েক বছর বাসাবোর ওই বাড়িতে বসবাস করলেও এখন থাকছেন বনানীর ওল্ড ডিওএইচএসে নিজের ফ্ল্যাটে। এবং নিজের কার্যালয় বানিয়ে বসেন নিকেতন এলাকায় একটি ভবনে। বাসাবোতে আরো রয়েছে তিনটি ভবন এবং ডেমরা ও দক্ষিণগাঁও ছাড়াও সোনারগাঁ উপজেলা, বান্দরবান ও গাজীপুরে কয়েক শ বিঘা জমি কিনেছেন তিনি।
রাজধানীর সবুজবাগ, বাসাবো, মতিঝিলসহ বিভিন্ন এলাকায় শামীম ঠিকাদারি কাজ করে থাকেন। শুধু তাই নয় গণপূর্ত ভবনের বেশি ভাগ ঠিকাদারি কাজ তিনি করেন। বিএনপি-জামায়াত শাসনামলেও গণপূর্তে এই শামীমই ছিলেন ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণকারী ব্যক্তি। সোনারগাঁ থানা বিএনপির সভাপতি আবু জাফরের চাচাতো ভাই তিনি।
এছাড়া শামীমের ব্যবসায়িক কার্যালয় জি কে বিল্ডার্সে অভিযান চালিয়ে ২০০ কোটি টাকার এফডিআর (ফিক্সড ডিপোজিট রেট) উদ্ধার করেছে র্যাব। এ সময় নগদ দেড় কোটি টাকা, একটি আগ্নেয়াস্ত্র এবং কিছু মাদক ও বিদেশি মুদ্রাও উদ্ধার করা হয়।